🌼 জগদ্ধাত্রী পুজোর নিয়ম | Jagaddhatri Puja Niyom in Bengali
জগদ্ধাত্রী পুজো পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম জনপ্রিয় ধর্মীয় উৎসবগুলির মধ্যে একটি। দুর্গাপূজার পরই এই পুজো আসে, এবং এটি বিশেষত চন্দননগর, কৃষ্ণনগর, ও হুগলি জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে অত্যন্ত ধুমধামে পালিত হয়। এই পুজোতে দেবী জগদ্ধাত্রীকে দেবী দুর্গারই এক রূপ হিসাবে পূজা করা হয় — যিনি ভক্তদের ভয় থেকে মুক্তি দেন ও জীবনে শৃঙ্খলা আনেন।
এই নিবন্ধে আমরা বিস্তারিত জানব জগদ্ধাত্রী পুজোর নিয়ম, উপাচার, ও পূজার সময়সূচি সম্পর্কে।
🕉️ জগদ্ধাত্রী পুজো কবে হয়
কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের নবমী তিথিতে জগদ্ধাত্রী পুজো অনুষ্ঠিত হয়। ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সাধারণত অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে এই পুজো পড়ে।
এই দিনেই দেবী মহাশক্তির আরাধনা করা হয়, যিনি সিংহবাহিনী ও অজগরদমনিনী রূপে পরিচিত।
🙏 জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রধান নিয়ম
১. পবিত্রতা বজায় রাখা
জগদ্ধাত্রী পুজোর অন্যতম নিয়ম হলো পবিত্রতা। পূজার আগের দিন ভক্তদের উচিত গৃহপরিবেশ ও মনকে পরিশুদ্ধ রাখা।
সকালে স্নান করে পরিষ্কার পোশাক পরা বাধ্যতামূলক।
২. উপবাস বা নিরামিষ আহার
অনেক ভক্ত জগদ্ধাত্রী পুজোর দিনে উপবাস বা নিরামিষ ভোজন করেন।
মাংস, মাছ, রসুন-পেঁয়াজ জাতীয় খাদ্য এদিন এড়িয়ে চলা উচিত।
৩. পূজার সামগ্রী প্রস্তুতি
পূজার জন্য প্রয়োজন —
-
পদ্মফুল, গাঁদাফুল
-
ধূপ, দীপ, চন্দন
-
নতুন বস্ত্র (লাল বা হলুদ রঙের)
-
ফলমূল, মিষ্টান্ন, দই
-
বেলপাতা, পান-সুপারি, সিঁদুর
৪. দেবী স্থাপন ও আহ্বান
ভোরবেলায় দেবী জগদ্ধাত্রীর প্রতিমা স্থাপন করা হয়।
তারপর “ওঁ হ্রীং জগদ্ধাত্র্যৈ নমঃ” মন্ত্রে আহ্বান করে পূজা শুরু করা হয়।
৫. অর্ঘ্য প্রদান ও পুষ্পাঞ্জলি
ভক্তরা সকাল ও সন্ধ্যায় অর্ঘ্য ও পুষ্পাঞ্জলি প্রদান করেন।
এই সময়ে দেবীর কাছে পরিবারের শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করা হয়।
৬. আরতি ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন
সন্ধ্যায় আরতি এবং দীপ প্রজ্জ্বলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আরতির সময় শঙ্খধ্বনি ও উলুধ্বনি পরিবেশকে পবিত্র করে তোলে।
🌸 জগদ্ধাত্রী পুজোর বিশেষ উপাচার
জগদ্ধাত্রী পুজোর দিনে দেবীকে বিশেষ ভোগ দেওয়া হয়। সাধারণত ভোগে থাকে —
-
খিচুড়ি
-
লাবরা
-
পায়েস
-
মিষ্টি
-
ফলমূল
অনেক স্থানে দেবীর নামসংকীর্তন ও আরাধনা গীতি পরিবেশিত হয়।
🪔 গৃহে জগদ্ধাত্রী পূজার নিয়ম
অনেক ভক্ত ঘরেই দেবী জগদ্ধাত্রী পূজা করেন। ঘরে পুজো করার কিছু সহজ নিয়ম:
-
পুজোর আগে ঘর ভালোভাবে পরিষ্কার করুন।
-
পূর্ব বা উত্তরমুখী করে দেবীর ছবি বা মূর্তি স্থাপন করুন।
-
সকালবেলায় স্নান করে সাদা বা লাল পোশাক পরুন।
-
চন্দন, ফুল, ধূপ, দীপ দিয়ে দেবীকে পূজা করুন।
-
“জগদ্ধাত্রী স্তোত্র” পাঠ করুন।
-
পুষ্পাঞ্জলি শেষে প্রণাম ও নৈবেদ্য প্রদান করুন।
🧘♀️ জগদ্ধাত্রী পুজোর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য
দেবী জগদ্ধাত্রী মানে “যিনি জগতকে ধারণ করেন”।
তিনি শক্তি, শৃঙ্খলা ও আত্মবিশ্বাসের প্রতীক।
এই পূজার মাধ্যমে মানুষ শেখে — অহংকার ও ভয়কে জয় করতে আত্মশক্তিই একমাত্র পথ।
📿 গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রসমূহ
জগদ্ধাত্রী পুজোর সময় উচ্চারণ করা যায় এমন কিছু মন্ত্র নিচে দেওয়া হলো –
ওঁ হ্রীং জগদ্ধাত্র্যৈ নমঃ।
সিংহবাহিন্যৈ বিদ্মহে মহাশক্ত্যৈ ধীমহি। তন্নো দেবী প্রচোদয়াত।
🏵️ জগদ্ধাত্রী পুজোর দর্শন
চন্দননগর, কৃষ্ণনগর, ও শ্রীরামপুর অঞ্চলে এই পুজো আলো, প্রতিমা ও থিমের জাঁকজমকে বিখ্যাত।
রাতভর আলোকসজ্জা, মেলা, ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলে।
🌺 উপসংহার
জগদ্ধাত্রী পুজো শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি আধ্যাত্মিক জাগরণের এক পবিত্র উপলক্ষ।
এই পুজোর মূল মন্ত্র — বিশ্বাস, পবিত্রতা, ও আত্মশক্তি।
যদি আপনি নিয়ম মেনে ভক্তিভরে দেবীকে পূজা করেন, তবে দেবী অবশ্যই আপনার জীবন সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধিতে ভরিয়ে তুলবেন।
Comments
Post a Comment